যুগে যুগে মনীষীদের কীর্তিগাথা রচিত হয়ে থাকে তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে; শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে। জীবদ্দশাতেই নয় শুধু, মৃত্যুর পরেও রচিত হয়ে থাকে কবিতা, গান। লেখা হয়ে থাকে গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস। শিল্পীরা তৈরি করে থাকেন ছবি, ম্যুরাল, ভাস্কর্য। তৈরি করা হয় চলচ্চিত্র। একজন লিজেন্ডকে সব কালের সব দেশের মানুষ এভাবেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। যে নেতা বা যে মহান পুরুষ মানুষের হৃদয়ে যতটা বেশি স্থান করে নিতে পেরেছেন, তাকে নিয়েই মানুষ বেশি চর্চা করে থাকেন। তেমনই একজন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০- ১৯৭৫)। বিশ্বের এক বিস্ময় তিনি। তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে গল্প, কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা। সংগীত এমন এক উৎকৃষ্ট মাধ্যম যারা দ্বারা অনায়াসেই মানুষের প্রাণের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় এবং একই সাথে বহু মানুষের মনের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করা যায়। কবিতা সবার বোধগম্য না ও হতে পারে কিংবা মনে না ও থাকতে পারে; কিন্তু গান সকল মানুষকেই আবেগতাড়িত করে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গানের সংখ্যাও কম নয়। কথা ও সুরের যে মেলবন্ধন তার মধ্য দিয়েই প্রকাশিত প্রাণের আবেগ। সুরে ও সংগীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে নিবেদন তা তুলে ধরাই এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। বলাই বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত সব গান সংগ্রহ করা বা সব গান নিয়ে আলোচনা করা দুঃসাধ্য। বহুল আলোচিত এবং পরিচিত গানগুলোই এ আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত অসংখ্য গানের মধ্যে প্রথম রচিত যে গানটির সন্ধান পাওয়া যায়, তার রচয়িতা বাউল শিল্পী শাহ আবদুল করিম।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের (১৯১৬ – ২০০৯, ১২ সেপ্টেম্বর) ঘনিষ্ঠতার কথা সর্বজনবিদিত। সিলেট তথা হাওর অঞ্চলে শেখ মুজিবুর রহমান যতবারই নির্বাচনী প্রচারণা কিংবা জনসভায় অংশ গ্রহণ করার জন্য গিয়েছিলেন, ততবারই অবধারিতভাবে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শাহ আবদুল করিম। কখনও শেখ মুজিবের বক্তৃতার আগে, আবার কখনও বক্তৃতার পরে আবদুল করিম গণসংগীত পরিবেশন করে জনসভায় আগত ব্যক্তিদের চাঙ্গা করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবার সুনামগঞ্জে যান ১৯৫৬ সালের ২৬ নভেম্বর। সে সময় তিনি দুর্নীতিদমন, বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প, পল্লি, কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন, সমাজকল্যাণ, সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী। ওই দিন বিকেলে শেখ মুজিব সুনামগঞ্জে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেন। সে সমাবেশে শেখ আবদুল করিমও অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সে সভায় তিনি শেখ মুজিবকে নিয়ে স্বরচিত একটি গান পরিবেশন করেন। গানটি এরকম ‘পূর্ণচন্দ্রে উজ্জল ধরা/ চৌদিকে নক্ষত্রঘেরা/ জনগণের নয়নতারা/ শেখ মুজিবুর রহমান/ জাগ রে জাগ রে মজুর কৃষাণ’। ধারণা করা হয়, এ গানই শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা কোনো প্রথম গান। ১৯৫৪ সালের দিকে রচিত এ গানের স্থায়ী অংশ পাওয়া গেলেও অন্তরার সন্ধান আর মেলে নি। সেদিনের সমাবেশের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শাহ আবদুল করিম তাঁর আত্মস্মৃতিতে লিখেছেন ‘ গণসংগীত পরিবেশন করলাম যখন/ এক শত টাকা উপহার দিলেন তখন// শেখ মুজিব বলেছিলেন সৎ-আনন্দমনে/ আমরা আছি, করিম ভাই আছেন যেখানে’।।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী গান সম্ভবত ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি…’। গানটির রচয়িতা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার (৫ ডিসেম্বর ১৯২৫ ২০ আগস্ট ১৯৮৬)। পৈতৃক বাড়ি ছিল পাবনা জেলায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগেই তিনি পাবনার ভিটে ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। সেটা ১৯৬৫ সাল। অংশুমান রায়ের জন্ম ভারতের মালদহে হলেও পূর্বপুরুষ ছিলেন রাজশাহীর বাসিন্দা। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের দু’জনেরই আলাদা আবেগ কাজ করত। সেখানকার সব খবরাখবর তাঁরা পাচ্ছিলেন রেডিওর মাধ্যমেই। মুক্তিযুদ্ধ তখন শুরু হয়ে গেছে। এপ্রিলের ৪ তারিখ। ভারতের কোলাকতায় গড়িয়ার একটা চায়ের দোকানে আড্ডা বসেছে। চায়ের দোকানে বসে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার অংশুমান রায়ের কাছ থেকে চারমিনার সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে তার উপর লিখলেন গানের প্রথম চারটি লাইন। সুরকার ও সংগীত পরিচালক দীনেন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে বসে চারটি লাইনের সুর তৈরি করেন অংশুমান রায় তাৎক্ষণিকভাবে।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ভাষণ তিনি শুনেছিলেন আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপেন তরফদারের রেকর্ড প্লেয়ারে। অনলবর্ষী সেই বক্তৃতা শুনে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ওই আড্ডাতে বসেই সিগারেটের প্যাকেটের সাদা কাগজে লিখলেন এই কালজয়ী গান ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি/ আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/ বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’। গানটি সুর করেছেন এবং গেয়েছেন অংশুমান রায়। প্রথম আড্ডার কয়েকদিন পর ১৩ এপ্রিল আবার আড্ডা জমে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ণদাস রোডের বাড়িতে। দেবদুলাল ছিলেন ‘সংবাদ পরিক্রমার’ উপস্থাপক। তাঁর বাড়িতে শিল্পী কামরুল হাসানের সাক্ষাৎকার নিতে এসেছেন ‘সংবাদ পরিক্রমার’ প্রযোজক উপেন তরফদার। এসেছেন অংশুমান রায়। সেখানেই অংশুমান রায় প্রথম গাইলেন এ গানটি। রেকর্ডও করা হলো। একটি ‘সংবাদ পরিক্রমা’য় এবং ‘সংবাদ বিচিত্রা’য় বাজানো হলো গানটি। পরের দিন তুমুল হৈচৈ পড়ে গেল। পরে হিন্দুস্থান রেকর্ড এ গানটি এল পি আকারে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক হয় রেকর্ডের এক পিঠে থাকবে অংশুমান রায়ের গান। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয়, অন্য পিঠে কী থাকবে, তাই নিয়ে। কথা ও সুর ঠিক রেখে গানটির ইংরেজি ভার্সন তৈরি করলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। অসামান্য জনপ্রিয় হওয়ার পর গৌরীপ্রসন্ন নিজেই এই গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ‘The Voice of not one, but a million mujibors singing’ শিরোনামে। এই গানটিই ‘মিলিয়ন মুজিবরস সিংগিং’ নামে পরিচিত। করবী নাথ নামে একজন মহিলা শিল্পী তখন মঞ্চে ইংরেজি গান গাইতেন। দীনেন্দ্র চৌধুরী তাকে বেছে নেন। দীনেন্দ্র চৌধুরীর সংগীতায়োজনে গানটি গেয়েছিলেন শিল্পী করবী নাথ। উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যে সব গান বাজানো হয়েছে, তা ঢাকায় উৎপাদিত ছিল। তবে কেবল বাপ্পী লাহিড়ীর সুরে ও শ্যামল গুপ্তের লেখা এবং আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘হাজার বছর পরে’ এবং ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম’ গান দুটি বাজানো হয়েছিল, যার প্রকাশক ছিল এইচএমভি।
বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বাজানো হয় ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’ গানটি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশ বেতারের জন্য লিখেছিলেন ‘মাগো, ভাবনা কেন/ আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে/ তবু শত্র এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি’। তাঁর এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি-স্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে জানানো হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’। একাত্তর সালে এ গান বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করেছিল। সাহস যুগিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু যেমন মিশে রয়েছে বাঙালির সমস্ত সত্তায়, কালজয়ী এ গানও তেমনি মিশে আছে বাঙালির চিরন্তন হৃদয়ে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং জনমনে শক্তি ও সাহস সঞ্চার করতে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছাড়াও শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা রকম কবিতা, গান, নাটক রচনা করেছেন ভেতরের তাড়না থেকে। একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে, উৎসাহিত করতে, সাহস যোগাতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যে গানটি, সেটি হচ্ছে ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রীষ্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালী’। এই অসামান্য গানটির রচয়িতাও গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর করেছেন শ্যামল গুপ্ত এবং গেয়েছেন শিল্পী শ্যামল মিত্র। এ গানটি এখনও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ এ গান। এর বাণী ও সুর চিরন্তন।
আর একটি জনপ্রিয় গানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, যে গানটি একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীকালে জনমনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। সারাদেশে গানটি সবসময় বাজতে থাকত। মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত এ গান। কৃষক-শ্রমিক-কুলি-মজুর সবার মুখে ফিরত এ গান সবসময়। বাঙালির অন্তর জুড়ে ছিল এ গান। এমনকি রাজনৈতিক কোনো জনসভার শুরুতে এ গানটি গাওয়া হতো। গানটির রচয়িতা মো. শাহ বাঙালি। সুর ও কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার। অসাধারণ এ গানটি হলো ‘মুজিব বাইয়া যাওরে নির্যাতিত দ্যাশের মাঝে/ জনগণের নাওরে মুজিব বাইয়া যাওরে’। আশা জাগানিয়া এ গানের মধ্যে শোষণ-বঞ্চনা-নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। বিনা দোষে মুজিবকে বারবার গ্রেফতার করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গও এসেছে। এ গানটির মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের প্রতি দেশের মানুষের আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বের প্রতি আস্থার কথাও রয়েছে গানটিতে। ভাটিয়ালির সুরে গাওয়া এ গানটিতে বাঙালি হৃদয়ের আর্তি রয়েছে।
১৯৯৮ সাল। প্রবল বন্যায় সারাদেশ প্লাবিত। খবরে দেখা যেত বানভাসি মানুষের আহাজারি। খবরের আগে ও পরে একটা গান বাজানো হতো নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। নিশ্চই মনে আছে সেই সময়ের কথা, যারা খবর দেখে থাকবেন তখন। হৃদয়ছোঁয়া সেই গান ‘সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল/ ছিল না চাঁদ/ ভোরের আকাশে সূর্যের আলো ঢেকে তোমার রক্ত/ মিশে গেল সমুদ্র সমতল’। অত্যন্ত হৃদয়বিদারক গান এটি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত অন্যতম শেষ্ঠ সংগীত বললেও অত্যুক্তি হবে না। গানের কোথাও বঙ্গবন্ধু/ জাতির পিতা/ শেখ মুজিব এসব শব্দের উল্লেখ নেই। অথচ গানটা শুনলে যে কোনো বাঙালির বুঝতে কোনো অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না যে, এ গান কাকে নিয়ে রচিত। অসাধারণ এ গানের রচয়িতা অধ্যাপক আবু সাঈদ। সুর করেছেন এবং কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ। গানটির রচনায় ও সুরে প্রযত্ন রয়েছে। হৃদয়ের আবেদন মিশে আছে একান্তভাবে। কোথাও পনেরই আগস্টের কথাও উল্লেখ নেই। অথচ বুঝতে অসুবিধে হয় না ভয়াল সেই রাতের কথা। অসহনীয় শোকের কথা। শোক যেন হৃদয় গলে গলে সুর হয়ে বেরিয়ে আসে এ গানে। গানের মধ্যে একটা জাতির কলঙ্কিত এক ইতিহাস জমাট বেঁধে আছে।
অসম্ভব আশা জাগানিয়া একটি গান ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই/ তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা/ আমরা পেতাম জাতির পিতা’। গানটি লিখেছেন হাসান মতিউর রহমান। সুর করেছেন মলয় কুমার গাঙ্গুলী। প্রথম কণ্ঠশিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী। পরে সাবিনা ইয়াসমিন গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। মানুষ আশায় বুক বাঁধে। মৃত্যুকে মেনে নিতে পারে না। তাই ভয়াল শোকাবহ পনের আগস্টকে দুঃস্বপ্ন ভাবতে চায়। ভাবতে চায় ‘বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। বাঙালি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না এ মৃত্যুকে। তাই কণ্ঠে বেজে ওঠে এ কালজয়ী গান।
এ সময়ের সাড়া জাগানো এবং উল্লেখযোগ্য একটা গান ‘হে বন্ধু বঙ্গবন্ধু,/ তোমার কালো ফ্রেমের চশমাটা আমায় দাও/ আমি চোখে দিয়ে দেখব/ তুমি কেমন করে দেশটাকে এত ভালোবাস’। শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এর গাওয়া এ গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সুর করেছেন তরুণ শিল্পী কিশোর। এক এক গীতিকার এক এক দৃষ্টিভঙ্গিতে বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করেছেন, উপলব্ধি করেছেন এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর গানে। শিল্পীর উপলব্ধিসঞ্জাত দর্শনের প্রকাশ ঘটেছে তাঁর গানে। এ জন্যই নানা গানে বঙ্গবন্ধু নানাভাবে উপস্থাপিত। বঙ্গবন্ধুর বিচিত্র বৈশিষ্ট্য ও আদর্শের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁকে নিয়ে রচিত অসংখ্য গানে।
আর একটা কালজয়ী গানের উল্লেখ না করলেই নয়, শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে, তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’। কথা মো. আবিদুর রহমান, সুর সুধীন দাশগুপ্ত। গানটি ১০ই জানুয়ারি আকাশবাণীতে প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তিনি গানটি করেছিলেন। এইচ এম ভি গানটির রেকর্ড বের করেন।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রচিত একটি গান ইতোমধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। গানটির কথা ‘আমাদের শেখ মুজিব’। লিখেছেন পান্না লাল দত্ত এবং সুর করেছেন নামকরা সুরকার সুপর্ণকান্তি ঘোষ। কণ্ঠ দিয়েছেন সুরজিৎ চ্যাটার্জি। গানটা বাংলাদেশ থেকেই প্রথম প্রকাশিত হবে। সুপর্ণকান্তি ঘোষের বক্তব্য অনুসারে গানটি জনপ্রিয়তা পাবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত এ পর্যন্ত এটিই হবে তাহলে সর্বশেষ গান।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও অজস্র গান রচিত হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ কথা নাসিমা বেগম, সুর অশোক কুমার পাল, শিল্পী সুমন রাহাত, সালমা জাহান প্রমুখ। ‘বঙ্গবন্ধু তুমি আমার সোনার বাংলাদেশ’ কথা হুমায়ূন কবির, সুর মইনুল ইসলাম খান, শিল্পী এস আই টুটুল। ‘তুমি চলে গেছো থেকে যাবে’ কথা জাহিদুল হক, সুর সত্য সাহা, শিল্পী শাম্মি আখতার। ‘বঙ্গবন্ধু তুমি শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ কথা এস ডি রুবেল, সুর এস ডি রুবেল, শিল্পী এস ডি রুবেল। ‘ও মুজিব তুমি মিশে আছো’ কথা অটামনাল মুন, সুর অটামনাল মুন, শিল্পী অটামনাল মুন। ‘জন্মভূমিকে মুক্ত করতে স্বাধীন সোনার বাংলা গড়তে, অধিকারহীন মাটি মানুষের দুঃখ করতে দূর, টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে এলে তুমি মুজিবুর’ কথা জ্যোতির্ময় সেন, সুর অশোক কুমার পাল, শিল্পী মুহিন।
লিখতে গেলে তার তালিকা অনেক লম্বা হবে। আর সব গান সংগ্রহ করা বা তথ্য যোগাড় করাটাও দুঃসাধ্য। এ চর্চা অব্যাহত থাকবে। ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’।
ধন্যবাদ লেখক ড. সন্তোষ ঢালীকে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বেশ কিছু গীতিকবিতা, সুরকার ও শিল্পীর নাম জানলাম। জানলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বন্ধেও। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আরো অনেক গান রয়েছে রয়েছে, সেগুলোও আলোচনায় আসা দরকার। মূল্যবান লেখাটি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ বিহঙ্গকে।